সানজিদা ফারিহা মজুমদার
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৩ ১৩:৫১ পিএম
শেষ বিকালে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে পায়চারী করছে অপর্ণা। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাল। আষাঢ়ের সন্ধ্যা। সেই সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। জানালার কাচে জমে আছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির কণা।
প্রকৃতির স্নিগ্ধতা দেখতে গিয়ে খেয়াল করেনি কখন বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হলো। রাতে ঘোর বর্ষার শুরু। কিন্তু সবকিছুর মাঝে জামিলের শূন্যতা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এমন এক বৃষ্টির দিনে তাদের মেঘের রাজ্যে থাকার কথা ছিল! মন অস্থির হয়ে উঠল অপর্ণার। মনে পড়ে গেল তাদের সেই প্রথম দেখা। মেঘলা আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কণার স্পর্শে সবুজের সমারোহ। সবই তো আছে, শুধু জামিল কাছে নেই। তাদের দূরত্বটা শুধু স্থানের, মনের নয়। অপর্ণা ভাবছে- সেই দূরদেশে বসে জামিল তাকে আজও দেখছে। এই প্রকৃতির মাঝে যেন জামিলের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে অপর্ণা।
অপর্ণা ভাবছে জামিলের কি মনে পড়ে সেদিনের কথা? যেদিন সে কলেজের গানের আসর থেকে বের হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। জামিলও তার বিতর্ক চর্চা থেকে বের হলো। তারপর দুজনের দেখা। কিছুদিন পর মুঠোফোনে জামিল যেমন দিনের কথা বলেছিল, আজ প্রকৃতি তেমন সাজেই সেজেছে। অপর্ণাকে দেখে জামিল বলে উঠল- এমন বৃষ্টির দিনেই আমাদের দেখা হবে।
আজ অপর্ণার মনে পড়ে গেল মেঘলা দিনগুলোতে জামিলের হাত ধরে স্রোতস্বিনী নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলা। প্রায়ই জামিল একটা প্রশ্ন করত, আমাদের দেখা হলেই বৃষ্টি হয় কেন? প্রথম দিকে এ কথা শুনে অপর্ণার হাসি পেত। ভাবত পাগলের মতো কি সব কথা, ছেলেমানুষি স্বভাব।
একবার ইচ্ছে করে আকাশ মেঘমুক্ত দিনে তারা বের হলো। পরীক্ষা হবে- সত্যি কি তাদের দেখা হলে বৃষ্টি হয়? যেদিন সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু। হঠাৎ জামিল বলে উঠল- চলো, আজ রিকশায় পুরো শহর ঘুরব। অপর্ণার মনে হলো জামিল এমনই বলছে। কিন্তু অবাক করে দিয়ে সেদিন জামিল তাকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরল। এমন কাজগুলোতে অপর্ণা বেশ অবাক হতো। তবে তার খুব ভালো লাগত।
সেদিন জামিল তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। সন্ধ্যায় পর মেসেঞ্জারে অনেক কথা হয় তাদের। আষাঢ়ের বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের কথা এগোয়- যেন কথার ফুলঝুরি। কখন যে রাত পেরিয়ে গেছে, সে খেয়াল কারও নেই।
এর এক সপ্তাহ পর। গোমতী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে অপর্ণা। উত্তাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে। অপর্ণার বুকের ভেতরও যেন ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। জামিলের পছন্দের শাড়ি পরে, হাতে একগুচ্ছ ফুল। সে জামিলের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ তাকে ভালোবাসার কথা জানাবে।
কিছুক্ষণ পর জামিল এলে অপর্ণা তার কাছে গেল। সে বলে উঠল- এই বৃষ্টি যেমন প্রকৃতিকে সাজিয়ে দিয়েছে, তুমিও ঠিক তেমনি আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করলে।
যদিও কর্মব্যস্ততার জন্য আজ তারা হাজার মাইল দূরে। তার পরও অপর্ণা প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় জামিলকে খুঁজে পায়। আজকের এই বিষণ্ন আষাঢ়ের দিনে অপর্ণা বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে- এমনই এক বৃষ্টির দিনে আবার কি তাদের দেখা হবে?