× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নজরুলের বিচিত্র জীবন

রাতুল মুন্সী

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩ ১৪:১৯ পিএম

নজরুলের বিচিত্র জীবন

প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ডাকনাম দুখু মিয়া। শৈশব কাটে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। পিতার মৃত্যুর পর সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ নিয়ে হাল ধরেন সংসারের। এরপর যোগ দেন লেটো গানের দলে। দলের জন্য গান লিখতেন ও গাইতেন। এর পর কাজ করেছেন রুটির দোকানে। তার জীবন ছিল বিচিত্র।

যুদ্ধক্ষেত্রে হয়েছেন সৈনিক। আবার মানুষের জন্য গেয়েছেন মানবতার গান। কারাবন্দি হয়ে গেয়েছেন শিকল ভাঙার গান। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সম্প্রীতির লক্ষ্যে লিখেছেন, মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। এ ছাড়াও তিনি লিখেছেন শ্যামা সংগীত, হামদ নাত। আবার প্রেমিক নজরুল নারীকে মর্যাদা দিতে বলেছেন, বিশ্বের যাহা কিছু মহান চির কল্যাণ কর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব নারীকে জানিয়েছেন শ্রদ্ধা। 

নজরুলের লেখা ছড়া, গল্প, উপন্যাসে জড়িয়ে থাকত ছোটবেলা। ‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম বাগে উঠবো আমি ডাকি।’ অথবা ‘প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা।’ এমন অসংখ্য ছড়ার দারুণ সব কথায় যেন মিশে থাকত শৈশব। তার লেখায় পরিলক্ষিত হয়েছে প্রকৃতির প্রতি টান, প্রেম ও ভালোবাসা। 

১৯১৭ সালের শেষদিকে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দিয়ে চলে যান করাচিতে। সেনানিবাসে বসে রচনা করলেন তার প্রথম গদ্য রচনা ‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী’। যুদ্ধ শেষে ৩২ কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করলেন। তার সঙ্গে থাকতেন সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদ। মূলত সেই সময় থেকেই নজরুলের সাহিত্য সাংবাদিকতার শুরু। তার ও রাজনীতিবিদ কমরেড মুজফ্‌ফর আহমদের যুগ্ম সম্পাদনায় ১৯২০ সালে দৈনিক নবযুগ, ১৯২২ সালে ধূমকেতু এবং ১৯২৫ সালে লাঙল পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

এরপর ১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসের দিকে মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসের গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সঙ্গে পরিচিত হন নজরুল। তার সঙ্গেই প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সঙ্গে। এক সময় নজরুল খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিচর্যা করেন প্রমিলা দেবী। যার সঙ্গে পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন নজরুল। তবে এর আগে তার বিয়ে ঠিক হয় আলী আকবর খানের ভাগ্নীর সঙ্গে। বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরে কাবিনে নজরুলের ঘরজামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাধে। তিনি ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হওয়ার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। 

১৯৪২ সালে কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল আসেনি। এ অবস্থায় কলকাতায় বসবাস করতে থাকেন কবিসহ তার পরিবার। পরে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪ মে নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। এর পর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও তার স্বাস্থ্যের বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ সালে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করা হয়। এরপর ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই/যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।’ কবির লেখা গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত ইচ্ছা বিবেচনা করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। তবে প্রমিলা দেবীর শেষ ইচ্ছা ছিল স্বামীকে যেন চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে তার কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা