× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চাঁদের মতো মুখ

আরাফাত আহমেদ রিফাত

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩ ১২:৪০ পিএম

চাঁদের মতো মুখ

গত কয়েক দিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ আগে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেছে কাব্য। বাস থেকে নেমে রিকশা করে নিজ বাড়ি খোয়াড়পাড় যাচ্ছে। অনেক দিন পর চিরচেনা শহরের ভেতর দিয়ে। এই শহরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে তার বেড়ে ওঠার স্মৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই চিরচেনা এই শহরের সঙ্গে কাব্যের দূরত্ব বাড়ে জ্যামিতিক হারে।

এবার কিছুদিন ছুটি পেয়েছে। তাই সুদূর চট্টগ্রাম থেকে শেরপুরে এসেছে কাব্য। নিজের চেনা জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখবে। গজনী অবকাশ, লাউচাপড়া, গারো পাহাড়, মধুটিলা ইকোপার্ক, অর্কিড গার্ডেন, পানিহাটা, ভূরুঙ্গামারী, রাজার পাহাড়, নাকুগাঁও, বাবেলাকোনা, নয়াবাড়ির টিলা, মায়াবী লেক, তারানি পাহাড় আরও কত জায়গা। কতবার যে স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে এসব জায়গায় ঘুরতে এসেছে তা কেবল জানে দূরন্ত শৈশব। 

এসব ভাবনার মাঝে রিকশা থানা মোড় পেরিয়ে নিউ মার্কেটে এসে পৌঁছেছে। হঠাৎ অনুরাধায় চোখ পড়ল কাব্যের। সিদ্ধান্ত বদল করল। এখন খোয়াড়পাড় যাবে না। আগে অনুরাধায় ছানার পায়েস খাবে। অনেক দিন এই বিশেষ মিষ্টান্ন খাওয়া হয়নি। আগে সময় পেলেই অনুরাধায় এসে ছানার পায়েস খাওয়া হতো। 

অনুরাধায় বসে ছানার পায়েস খাচ্ছে কাব্য! হঠাৎ মেহজাবির কথা মনে পড়ল। কাব্য যাকে মেহু বলে ডাকে। ছানার পায়েস মেহুর খুব পছন্দের। ক্যালেন্ডারে চোখ পড়তেই চমকে উঠল কাব্য। আজ ৮ তারিখ। আগামীকাল তো মেহুর জন্মদিন। 

বাড়ি যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে মেহুর কাছে যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল হলো কাব্যের। মেহুর বাড়ি ময়মনসিংহ, ঘণ্টা দেড়েকের রাস্তার দূরত্ব। ঠিক রাত ১২টায় বার্থডে উইশ না করলে খুব রাগ করবে মেহু। অবশেষে গাড়িতে করে ময়মনসিংহের দিকে রওনা হলো কাব্য। সঙ্গে মেহুর পছন্দ কিছু ফুল আর ছানার পায়েস। একটা কেক নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল মেহু কেক পছন্দ করে না। 

ময়মনসিংহের পথে গাড়ি চলছে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কাব্য। আজ পূর্ণিমা হলে বেশ হতো। মেহু জোছনা পছন্দ করে। কয়েক বছর আগে সেই জোছনার রাতটা আজও মনে পড়ে তার। টানা এসাইনমেন্ট শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কাব্য। মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভাঙে তার। ডিসপ্লেতে লেখা ‘MAHJABEE Calling’ ফোন ধরতেই কোনো ভূমিকা না করেই সোজা জিজ্ঞেস করল, আজকের চাঁদ দেখেছ? ঘুম জরজর কণ্ঠে কাব্য উত্তর দিল, না।

মেহু- তাহলে সোজা ছাদে ওঠো।

কাব্য- এখন চাঁদ না দেখলেই নয়? 

মেহু- কেন চাঁদ দেখতে পছন্দ করো না?

কাব্য- চাঁদের আলোয় তোমাকে দেখতে পছন্দ করি।

এমন উত্তরে খানিকটা লজ্জা পেল মেহু। মনে মনে ভাবল, ভাগ্যিস ফোনে কথা বলছে। সামনাসামনি কথা বললে ওর লজ্জিত ভাবটা ধরে ফেলত কাব্য। তখন খুব বিব্রত অবস্থার সৃষ্টি হতো। 

কথোপকথন অন্যদিকে মোড় নেওয়ার আগেই মেহু বলল, আচ্ছা ছাদে উঠতে হবে না। তুমি রুমের জানালা দিয়েই চাঁদ দেখতে পারো। জানালা খুলে আকাশের দিকে তাকাল কাব্য। কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না, নীরব থাকল। ওপাশ থেকে মেহু নীরবতা ভেঙে বলল, কী হলো? চাঁদ দেখতে পেলে? সঙ্গে সঙ্গে কাব্যর উত্তর, তোমায় দেখতে পেলাম। এমন উত্তরে আরও খানিকটা লজ্জা পেল মেহু। 

কাব্য- আচ্ছা তোমার নামটা বাবা রেখেছেন?

মেহু- হ্যাঁ। কেন বলো তো?

কাব্য- উনার নাম রাখা কিন্তু শতভাগ সফল। মেহজাবি শব্দের অর্থ- চাঁদের মতো মুখ যার।

মেহু- তুমি বলতে চাচ্ছ আমার মুখ চাঁদের মতো? চাপাবাজিকে একেবারে শৈল্পিক করে ফেলেছ! 

কাব্য- সত্যি বলছি। তুমি চাঁদের মতো সুন্দর নও, চাঁদ তোমার মতোই সুন্দর। 

মেহু- এই উপলব্ধি কখন হলো? 

কাব্য- এইমাত্র। চাঁদে তোমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি, আয়নার চেয়েও স্বচ্ছ। 

মেহু- এহ! ঢং কত!

ভাবনার গভীরে যাওয়ার সুযোগ পেল না কাব্য। সজোড়ে ব্রেক করল বাসের চালক। হঠাৎ করে কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল কাব্যর। 

ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিল মেহু। ফুলপুর আসতেই মেহুদের বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিপরীতমুখী এক মালবাহী ট্রাকের। বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। হতাহতের সংখ্যা অনেক। সেই সংখ্যায় মেহুও ছিল। মেহুর সঙ্গে একই বাসে বাড়ি যাচ্ছিল তার বান্ধবী মিলি। ভাগ্যক্রমে শুধু মাথায় আর কনুইয়ে চোট লাগে মিলির। মেহুর এক্সিডেন্টের খবর মিলির কাছ থেকে জানতে পাড়ে কাব্য। 

মেহুর খবর শুনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যায় কাব্য। মেহু আইসিইউতে, অবস্থা খুবই খারাপ। ডাক্তাররাও আশার বাণী শোনাচ্ছেন না। দুর্ঘটনার তিন দিনের মাথায় আইসিইউতে মারা যায় মেহু। মেহজাবি তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তবে রেখে গেছে সরষে ফুলের মতো রঙিন কিছু সুখের স্মৃতি। 

কাব্য মেহুর সঙ্গে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে চেয়েছিল। যেই চাঁদের মতো সুন্দর মেহু। না! চাঁদ মেহুর মতো সুন্দর।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা