× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আবেগ নদী

সজিব মিয়া

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম

আবেগ নদী

গতকাল রাতে হঠাৎ করেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন। ওপাশ থেকে মধ্যবয়সি কণ্ঠের এক নারীর প্রশ্ন : আপনি কি তপু? 

তপু ফরেন মিনিস্ট্রিতে সহকারী সচিব হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ইতস্ততভাবে উত্তর দিলেন জি, কে বলছেন? ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর এলো, আমি অণু।

তপু কিছুক্ষণের জন্যে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। ইতোমধ্যেই অণুর পাল্টা প্রশ্ন- এতদিনে কি তোমার একবারও আমার কথা মনে পড়েনি? সেদিন কোথায় হারিয়ে গেলে? 

তপু কী উত্তর দিবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। অণু তাকে এতদিন খুঁজেছেন তপুর যেন অবিশ্বাস্য লাগছে। যদিও একই কাজ তিনিও করেছেন। 

তপু ধরেই নিয়েছিলেন যে অণু এতটাই রাগ করেছেন যে আর কোনো দিন ওদের কথা হবে না। সেদিনের সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা ওদের পথকে আলাদা করে দিয়েছিল। এতদিনে তপু সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। অণুর অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনকল পেয়ে যেন পেছনের দিনগুলোতে ফিরে গেলেন তপু।

আজ থেকে ১০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বিকেলে অণুর সঙ্গে তপুর দেখা। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা। অণু ছিলেন তপুর দুই বছরের সিনিয়র। কিন্তু ভালো লাগা তো সিনিয়র-জুনিয়র মানে না। যেন সেই কথার মতো এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার। তপু ইচ্ছে করেই অণুর কাছে ব্যাচমেট পরিচয় দিল। যদিও অণু তখন স্নাতকোত্তর শেষ করে পুরোদমে বিসিএসের প্রিপারেশন নিচ্ছেন। তপু সবেমাত্র স্নাতক শেষ বর্ষে। 

দুজনের বন্ধুত্ব বেশ জমে উঠল। একসময় সেই বন্ধুত্ব রূপ নিল প্রেমে। দুজন দুজনার প্রতি যেন অসম্ভব ভালোবাসা। একদিন তারা ঠিক করলেন বিয়ে করবেন। সাক্ষী হিসেবে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে হাজির অণু। কিন্তু তপুর কোনো খোঁজ নেই। ফোনে কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না। 

হঠাৎ এক বন্ধু এসে জানালেন, তপু অণুর সেইম ব্যাচ না। এতদিন যা বলেছেন সব মিথ্যে। অণুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চোখ ভেজা, নিঃশব্দে কান্না করছেন অণু। কাজী অফিসেই তিনি অপেক্ষা করছেন তপুর জন্যে। অণু মনস্থির করল, যে লোকটা তাকে পাওয়ার জন্যই এত মিথ্যে বলেছে, অসম্ভব ভালো বেসেছে। তার সঙ্গে সারাজীবনের জন্য থাকাই যায়। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও তপু আসেননি। 

ওদিকে তপু জানতে পারলো, অণু সব সত্যি জেনে গেছে। তারপরও তপু ভেবেছিলেন অণুকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে তাকে সরি বলবেন। তপুর বাসা থেকে কল এলো, তপুর বাবা স্ট্রোক করেছেন। এখনই বাসায় যেতে হবে। 

তপু বুঝে উঠতে পারলেন না এখন তিনি কী করবে। অবশেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন। একটি বারের জন্য অণুকে কল দেওয়ার সুযোগ হয়নি তার। আর কল দিবেই বা কোন মুখে? অণুর সামনে এই মিথ্যে প্রতিচ্ছবি নিয়ে তিনি দাঁড়াবেন কী করে? 

রাত হলে অণু কাঁদতে কাঁদতে ক্যাম্পাসে চলে এলেন। তারপর তপুর সব বন্ধু-বান্ধবের কাছে তার খোঁজ করলেন। কিন্তু তপুকে আর খুঁজে পাননি তিনি। 

ওদিকে দুই দিনের মাথায় তপুর বাবা মারা গেলেন, পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এলো। তার ওপর পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ল তপুর ওপর। 

দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে অণু ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় চলে যান। বিসিএস আর দেওয়া হয়নি তার। বাসা থেকে সরকারী চাকরিজীবী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হলো। পরিবারকে কিছুটা গুছিয়ে মাস ছয়েক পর তপু ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। কিন্তু অণুকে আর পাননি তিনি। ততদিনে দিব্যি সংসার করছেন অণু। তপুর কিন্তু আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বারবার হ্যালো হ্যালো শব্দে তপুর হুঁশ ফিরল।

অণু : কী হলো? উত্তর দিচ্ছ না কেন?

তপু কী উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছেন না। ফোনটা কানের কাছে ধরে রেখেছেন। ওপাশ থেকে অণুর বাচ্চার কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। অণুর মন খারাপ। তা তপু বেশ বুঝতে পারছেন। সব কিছু থেকেও অণুর কী যেন নেই। আজকে রাতে হয়তো তপুর ঘুম হবে না। আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগের রাতগুলোর মতো। ভীষণ ভারী রাত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা