মেহবুবা মৌলি সূচনা
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৫ পিএম
আমার একমাত্র প্রেমিকা প্রেমা আমার কাছে সচরাচর মুখ ফুটে কিছু আবদার করে না। কিন্তু যখনই কিছু চায় তখন আমার মুখের দিকে তাকানো যায় না। সেই ভয়াবহ বিষয়টির আরও একবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সামনে ঈদ। প্রিয়তমা আমার কাছে মাত্র একটি জামা চেয়েছে। যার বাজারমূল্য মাত্র ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। এই কথা শোনার পর থেকেই আমি বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি। কারণ বাবার থেকে নেওয়া গত মাসে ভার্সিটির সেমিস্টার ফি এর টাকায় প্রেমাকে বিরিয়ানি খাইয়েছি। এখন মাসের মাঝামাঝি, তাই পকেটে ফুটো কড়িও নেই।
বলা বাহুল্য, আমার নাম শাহীন এবং এই মুহূর্তে আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ প্রেমের মরা জলে ডোবে না। তাই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার জন্য তাকে মিসড কল দিলাম।
প্রত্যেকের জীবনে এরকম একজন বিশেষজ্ঞ বন্ধু থাকে যে কি না অন্যের বিপদে চমৎকার সমাধান দেয়, কিন্তু নিজেই সেই সমস্যায় ফেঁসে যায়। আমার ক্ষেত্রে সেই সমাধানের কাণ্ডারী রাকিব। সে সব শুনে বলল, এসব তার বাঁ হাতের খেলা! উল্লেখ্য, বন্ধুমহলে তার একটা নাম আছে, ‘অস্বাস্থ্যকর রাকিব’। তার এই অদ্ভুত নামের মানে হলো রাকিব কখনও হাত ধোয় না এবং তার হাতে সব সময়ই ময়লা থাকে।
যাই হোক, আমার অস্বাস্থ্যকর বন্ধুর বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না। প্ল্যান হলো আমি টাকা ধার নিয়ে প্রেমাকে জামাটা কিনে দেব। যেহেতু জামার ব্যাগটা আমার হাতে থাকবে, রাকিব সহজেই ছদ্মবেশে বাইক থেকে ব্যাগটা টান দিয়ে পালাবে। এরপর প্রেমাকে মিথ্যা ছিনতাইয়ের গল্প শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে দুই বন্ধু জামাটা ফেরত দিয়ে দোকান থেকে টাকা নিয়ে আসব।
সেই দিন এলো। প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য আমি শপিং ব্যাগটা নিয়ে রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছি। রাকিব বাইকে করে ব্যাগটা নিয়ে পালিয়েও গেল। কিন্তু ঠিক ৩০ হাত দূরত্বে তার বাইক দাঁড়িয়ে গেল। স্টার্ট নিচ্ছে না। এদিকে প্রেমাও ছিনতাইকারীর দিকে ছুটেছে। উপায় না দেখে রাকিব ব্যাগ নিয়ে শপিং মলের দিকে দৌড় দিল। রাকিবের পেছনে পেছনে প্রেমা দৌড়াচ্ছে, আর প্রেমার পেছনে আমি। কিন্তু শপিং মলের ভেতরে রাকিবকে দেখে ফেলল তার প্রেমিকা নীলা। এবার রাকিবের পেছনে নীলা, নীলার পেছনে প্রেমা, আর প্রেমার পেছনে আমি। একসময় রাকিব ধরা খেয়ে সব সত্যি কথা বলে দিল। প্রেমিকারা আমাদের মুখে কথার ঝাড়ু মেরে ব্রেক আপ করে চলে গেল।
আজ ঈদ৷ রাকিব নীলার জন্য চোখের জল, নাকের জল এক করে কাঁদছে। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দুই বন্ধু বিরিয়ানি খেতে বসেছি। রাকিব রাজপুত্রের মতো হাত না ধুয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছে। আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো অস্বাস্থ্যকর বন্ধুর খাওয়া দেখছি।