আহরাফ রবিন
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মেটে আলুসমেত কাঁকড়ার মাংসটা লঙ্কা দিয়ে ঝাল ঝাল রান্না করলে খেতে ভারি সুস্বাদু হয়। সতীশ খেতে বসেছে। কাঁকড়ার মাংসের বাটিটা চন্দ্র এগিয়ে দিয়ে বলল‚ ‘এই নাও, তোমার পছন্দের পদ রান্না করেছি।’
সতীশ বাটিটা হাতে নিয়ে বলল‚ নদীতে গিয়েছিলি?
-না! নদীতে যাব কেন?
-নইলে কাঁকড়া পেলি কোথায়?
-বিপিন খুড়া দিয়েছেন। নদীতে আজ অনেক কাঁকড়া ধরা পড়েছিল জালে।
উত্তরে পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে তিরতির গতিতে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটি নদী। এ নদীটির জলের আশীর্বাদেই যেন টিকে আছে এখানকার জনজীবন! পাহাড়ের ঢালুতে চা-বাগান। শহর থেকে বাবুরা এসে এখানে ব্যবসা করেন। গভর্নমেন্টের কাছ থেকে জঙ্গলের অনেকটা স্থান তারা লিজ নেন। তারপর সেখানে চা-বাগান করেন।
প্রায়ই শহর থেকে বাবুরা এখানে আসেন। চা-বাগানের এক কোণে বাংলোয় থাকেন। বাবুরা এলে সতীশের কপাল খুলে যায়। সতীশ বাবুদের ফরমায়েশ খাটে। বিনিময়ে খাবার ও কিছু টাকাপয়সা জুটে যায় তার। মাঝেমধ্যে বিলেতি মদের বোতলও।
সতীশের বাংলোয় যাওয়াটা চন্দ্র পছন্দ করে না। চন্দ্রের ধারণা‚ শহুরে বাবুরা মোটেও ভালোমানুষ নয়। এই গভীর জঙ্গলে তারা কেবল ব্যবসা করতেই আসেন না। তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। সুশ্রী বউ থাকতেও এরা এখানে এসে বাংলোয় নষ্ট মেয়েছেলেদের সঙ্গে ফুর্তি করে। গলা অবধি বিলেতি মদ গেলে।
চন্দ্র কঠিন গলায় বলল‚ শহুরে বাবুরা এলে তুমি বাংলোয় যেতে পারবে না।
সতীশ বলল‚ কেন রে? ওখানে যাই বলেই তো মাঝেমধ্যে এত্ত এত্ত ভালো খাবার খেতে পারিস।
ওদের আমার পছন্দ হয় না। ওরা বাজে লোক। ওদের সঙ্গে মিশলে তুমিও বাজে লোক হয়ে যাবে। চন্দ্র আনমনে কথাগুলো বলতে লাগল।
সতীশ হাহা করে হেসে উঠল। তারপর চন্দ্রের হাত ছুঁয়ে বলল‚ তোকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি‚ আমি ওদের মতোন বাজে লোক হব না।
চা-বাগানের বাংলোয় হ্যাজাকবাতি জ্বলছে। আলোয় চারপাশ ঝলমল করছে। সতীশ এগিয়ে গেল। শহর থেকে বাবুরা এসেছেন।
সতীশ দ্রুত হেঁটে বাড়ি ফিরে গেল। চন্দ্র উঠানে বসে আছে। প্রদীপ জ্বলছে। বাড়ির পেছনে ছাতিম গাছ। সেখান থেকেই একটি প্যাঁচা ডেকে যাচ্ছে থেকে থেকে। গভীর রাত। চন্দ্রকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল সতীশ। এই চন্দ্র, সতীশ ফিসফিস করে ডাকল। চন্দ্রের ঘুম ভেঙে গেল। বিস্মিত চোখে সতীশের দিকে তাকিয়ে বলল‚ কী হইল, কিছু বলবা?
সতীশ ক্রমে চন্দ্রের কাছ ঘেঁষে এগিয়ে যেতে লাগল। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাছপালা‚ পাহাড়‚ চা-বাগান এবং জঙ্গলে ঘেরা সৌন্দর্যমণ্ডিত এ অঞ্চল হলো মানব-মানবীর লীলাভূমি।