প্রজীৎ ঘোষ
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৫ পিএম
প্রিয়তমাসু,
সেই ২০০৩ সালে আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি, বৈশাখের দ্বিতীয় দিন তুমি আমাকে ভিউকার্ডে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানিয়েছিলে। আমি যার নাম দিয়েছিলাম শুভেচ্ছা কার্ড। তখন থেকেই আমি তোমার প্রেমে মুগ্ধ। তোমার চোখে তাকাবার সাহস না হলেও, সেই শুভেচ্ছা কার্ডের দিকে চেয়ে চেয়ে অনেক রজনি বিনিদ্রায় কেটে গেছে।
তোমার নামের শেষে চক্রবর্তী ছিল, তা আমি জানতাম। তবু কেন যে নামের শেষে বিশ্বাস যুক্ত করে ডাকপিয়ন মারফত চিঠি লিখেছিলাম। যা ভাবলে নিজেকে আজও সামলে নিতে পারি না। কেন এমন ভুল করলাম, অন্য কোনো মিতা বিশ্বাসের দাদা আমাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেছিল সেদিন। তোমার বাড়ি থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব ছিল প্রায় ৫ কিলোমিটার। তখন রাস্তার অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। তোমাদের গ্রাম চিনতাম না, কখনও যাইনি। কিন্তু এখন শুক্র ও শনিবার রুটিন করে এক প্রকার তোমাদের বাড়ির উঠোন দিয়েই আমার যাতায়াত।
আমার জন্য তুমি স্কুল বদল করেছিলে। হয়তো লজ্জায়। কিন্তু নিয়তির কী খেলা, আমাদের স্কুলের ১০ জন ছাত্রের রেজিস্ট্রেশনও তোমার সেই নতুন স্কুলে হয়। একপলক দেখার জন্য কত চৈত্রের কাঠফাটা রৌদ্রের খরতাপ সহ্য করে পথের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেছি, হয়তো তুমি তা অনুভবও করতে পারবে না। হয়তো তোমার জন্যই আজকে সাহিত্যজগতে আমার বিচরণ। কবি থেকে গীতিকবি হয়ে ওঠা। তোমার সঙ্গে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কোনো দিন কথা হয়নি। কিন্তু সেই তুমিই আমার মনের রানী।
এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন তোমাকে দেব বলে যে রজনিগন্ধা কিনে এনেছিলাম, তা আমি সাইকেলে আঘাতের পর আঘাত করে বিচ্ছিন্ন করেছি। তুমি সেদিন বলেছিলে, আমি আপনাকে বন্ধু মনে করি। আর কোনো দিন চিঠি লিখবেন না। তুমি রজনিগন্ধা নাওনি। আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম প্রিয়তমাসু। সেই ভালোবাসা যেন স্বর্গ থেকে এসেছিল; যা আজও হৃদয়ে গেঁথে রেখেছি। তোমার সেই শুভেচ্ছা কার্ড আজ কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে। শুধু আছে তোমার একটুকরো স্মৃতি।
আজ তুমি আমার থেকে অনেক অনেক দূরে। জানি না কেমন আছো। হয়তো অন্য কারও সহধর্মিণী। তুমি আজ অন্য দেশে থাকো। যেখানেই থেকো ভালো থেকো প্রিয়তমাসু। ভালোবাসা দিবসে আমি তোমাকে বলতে চাই, এখনও তোমায় ভালোবাসি। তুমিই আমার ভালোবাসা। নিয়তির কশাঘাতে আমাদের মিলন হয়নি। কিন্তু ভালোবাসার কাহিনি ঠিকই রচিত হয়েছে।