আরেফিন ইসলাম
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৫ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৭ পিএম
ছবি : আবির হাসান
শীতকাল আমার অত্যন্ত পছন্দের একটি সময়। শীতকাল মানেই ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো গ্রাম বাংলার অপরূপ দৃশ্য। শীতের স্মৃতিবিজড়িত অনেক ঘটনার মধ্যে অন্যতম আমার মামাবাড়িতে প্রতি ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কাটানো বেশ কিছু সময়; যা ছিল আমার জীবনের কাটানো সব থেকে সুখের স্মৃতি।
পরীক্ষা শেষে আমাদের গন্তব্য হতো প্রাণের মামাবাড়ি। সব খালাতো ভাই-বোন মিলে একসঙ্গে সেখানে যাওয়া হতো। মামাবাড়ির প্রধান আকর্ষণ ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা ছিল মনোমুগ্ধকর ও অপরূপ। নদীর তীরে হওয়ায় গ্রামটিতে ছিল ছোট ছোট খাল, গাছপালা, সবুজে ঘেরা।
সালটা ২০২১, সবাই মিলে বরাবরের মতো লঞ্চে যাত্রা করলাম মামাবাড়ির উদ্দেশে। সারা রাত গল্প করতে করতে সকালে পৌঁছে প্রচণ্ড কনকনে শীতে বাড়িতে ঢুকতেই নানু ও মামির বানানো নানারকম পিঠাপুলি। সাথে আরও ছিল গরম গরম খিচুড়ি ও আচার। একসঙ্গে বসে সবাই মিলে খাওয়ার এক আনন্দঘন মুহূর্তও ছিল।
দুপুরে তাজা শাকসবজির পাশাপাশি থাকতো নদীর তাজা মাছ; যার স্বাদ অতুলনীয়। রাতে হাঁসের মাংস, চালের রুটি ছিল খাবারের প্রধান আকর্ষণ। খুব ভোরে খেজুরের রসের জন্য প্রায়ই আমরা সবাই মিলে হাঁটতে বের হতাম। বিকালে নদীর পাড়ে সবাই মিলে গান-আড্ডা, নৌকা ভ্রমণ। কখনও বনভোজন কিংবা মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; যাতে অংশগ্রহণ ছিল আশপাশের গ্রামের কিশোর-কিশোরীর।
রাতে ছিল শীতের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টন। মধ্যরাতে সব ভাই-বোন মিলে লুডু, চোর-পুলিশ, তাস খেলা। এতে জমে উঠত পুরো বাড়ি।
তবে সেই সময়টা এখন আর নেই। নানু চলে যাওয়ার পর আম্মাও চলে গেলেন পৃথিবী থেকে। প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেললাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলে গেল। এখন শহুরে ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয় না।
ইটের পাহাড়ে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম কখনই সেই আমেজ হয়তো পাবে না। পাবে না সেই দুরন্ত শৈশব। সেই সময় ছিল না মোবাইল ফোনের বিচরণ, ছিল না কোনো অনলাইনে গেমের আসক্তি। তবে হারিয়ে ফেলা সেই সময়ে ফিরে যেতে বেশ ইচ্ছা করে। যদি কখনও ফিরে যেতে পারতাম...