রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:০৩ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:০৯ পিএম
ছবি: আবির হাসান
গ্রামের শীত মানেই বাড়িতে বাড়িতে পিঠাপুলির ঘ্রাণ। ভোর হওয়ার আগে আম্মা খড়-কাঠ দিয়ে উঠোনে বড় করে আগুন পোহানোর ব্যবস্থা করে রাখতেন। আমরা ভাইবোনসহ বাড়ির বড়রা গোল করে বসে আগুন পোহাতাম। ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশে টুথপেস্ট নিয়ে বসে যেতাম আগুনের সামনে। কখনও বা জ্বালানির ছাই দিয়েও দাত মেজে ফেলতাম।
দাঁত মাজা হয়ে গেলে আম্মা হয়তো এক বাটি মুড়ির সঙ্গে গুড় দিতেন। খেতে খেতে নতুন বইয়ের কবিতাসহ বাড়িতে থাকা বড় মানুষের গল্প হজম করতাম। মুড়ি খাওয়া শেষ না হতেই আগুন থেকে বের করে দেওয়া হতো ম্যারা পিঠা। এখন শহরের রাস্তায় রাস্তায় এ পিঠা বিক্রি হয়।
স্কুলগুলোয় প্রথম ক্লাস শুরু হতো। টেবিলে টেবিলে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। রোদ উঠলেই খালামণি বইয়ের মলাট লাগাতে বসতেন উঠোনে। সঙ্গে ভাপা, চিতইসহ নানা রকমের পিঠা। খড়কাঠ দিয়ে উঠোনে আগুনও অনেক সময় নেভানো হতো না। শীতের বিকালটা খুব ভালো করে বোঝা যায় না। একবারে সন্ধ্যা নেমে আসে। গোয়ালঘরগুলোয় দেওয়া হতো খড় দিয়ে তৈরি মশা তাড়ানোর ধোঁয়া। চারদিক গোয়ালঘরের ধোঁয়ায় ঝাঁঝাঁ করত। রাত পোহাত ধান হাত দিয়ে ছাড়ানোর শব্দে। তখনও ধান মাড়াই করার মেশিন আসেনি।
আমার নানির বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। মামা, খালা, মামাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলাধুলা করে নানির বাড়িতেই মেহমান হয়ে থেকে যেতাম। সেটা বেশি করতাম মঙ্গলবার, শুক্রবার।
কারণ তখন মঙ্গলবার, শুক্রবার বিটিভিতে আলিফ লায়লা সিন্দবাদ হতো। টেলিভিশন ছিল না বলে নানিবাড়ির টেলিভিশনে আলিফ লায়লা সিন্দবাদ দেখতাম।
নানিবাড়িতে নানির ছোট একটা চৌকি। নানি মাটিতে খড় দিয়ে বিছানা করতেন। আমরা হাত-পা ধুয়ে বিছানায় যেতাম বাটিতে করে মুড়ি নিয়ে। সঙ্গে গুড় থাকত, অনেক সময় থাকত না।
খুব বেশি মিস করা হয়, শৈশবের সময়টুকু।