× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুর্গত মানুষের পাশে আছি আমরা

দেবাশীষ বিশ্বাস

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১২ পিএম

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ‍উপজেলার বামনডাঙ্গায় সুবিধাবঞ্চিত ৩০০ শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণ করে অদম্য বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ‍উপজেলার বামনডাঙ্গায় সুবিধাবঞ্চিত ৩০০ শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণ করে অদম্য বাংলাদেশ

বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের পাঠক সংগঠন অদম্য বাংলাদেশ। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হয়েছে সংগঠনটি। চোখের চিকিৎসা, নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন বিতরণ, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের হুইলচেয়ার বিতরণ ছিল যার অন্যতম। প্রতিদিনের বাংলাদেশ ও আল খায়ের ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়েছে এসব সাহায্য কার্যক্রম। 

শীতার্তের জন্য ভালোবাসা

‘অ্যালা জার (ঠান্ডা) নাগব্যার নোয়ায় বাবা; তোমার কম্বল গায়েত দিয়্যা আরামে ঘুমামো। তোমরাও ভালো থাকেন,’ কম্বল হাতে পেয়ে এমন অভিব্যক্তি ৯০ বছরের গুলজন বেওয়ার।

গত কয়েকদিন উত্তরাঞ্চলে যে তীব্র শীত পড়ছে, তাতে অনেকটাই নাজেহাল অবস্থায় মানুষ। আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠক সংগঠন অদম্য বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রংপুর ও কুড়িগ্রামে নিম্ন আয়ের প্রায় ৬০০ শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।

তীব্র শীত আর কুয়াশার মধ্যেই বিতরণস্থলে আসতে থাকে শীতার্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারহান লাবীব জিসান, প্রতিদিনের বাংলাদেশের রংপুর ব্যুরোপ্রধান মেরিনা লাভলী, আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব ও অদম্য বাংলাদেশের রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম দুলাল, প্রতিদিনের বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার এহসানুল হক সুমন, অদম্য বাংলাদেশের সদস্য অর্জুন দাস, নভেল চৌধুরীসহ অন্যরা।

অপরদিকে, নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গায় কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান। প্রতিদিনের বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা, অদম্য বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য আতিকুর রহমান রাজা, আসাদুজ্জামান আনন্দসহ সংবাদকর্মী ও গুণিজনেরা।

রংপুরে শীতার্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ভালোবাসার কম্বল

কম্বল হাতে পেয়ে বড়মানী এলাকার শতায়ু ভোলা মুন্সি বলেন, ‘এবারের ঠান্ডায় কাহিল আমরা। এই কম্বল দিয়ে ভালোই করলেন। অ্যালা দিন ভালোই কাটবে।’ এচেরভান নামের এক দুস্থ বলেন, ‘বয়স্ক মা খুব কষ্ট করে আছেন। এই কম্বল তার খুব উপকার করবে।’

‘কয়েক দিন ধরি যে জার (শীত) পড়ছে, আইতোত (রাতে) বেড়ার ভেতর দিয়া বাতাস হুহু করে ঢুকি পড়ে। খ্যাতাকোনাও (কাঁথাটা) ছিঁড়ি গেইছিল। জারোতে আইতোত ঘুম হয় না। দিনের বেলাও কুয়াশা আর বাতাসোত গাও কাঁপি ওঠে। মোটা একটা কম্বল পায়া রাইতোত ঘুম ভালো হইবে। এই শীতোত মোর কষ্ট কমি গেইল’, কথাগুলো বলছিলেন রংপুর মহানগরের জুম্মাপাড়ার ৭২ বছর বয়সের নুরনাহার বেগম।

কম্বল পেয়ে একই ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন রংপুর ও কুড়িগ্রামের কয়েকশ মানুষ। তারা জানান, জবুথবু শীতে কম্বল পেয়ে এখন সহজেই তারা শীতনিবারণ করতে পারবেন।

হিমশীতে যখন কাঁপছে দেশ, তখন শীতার্তদের জন্য ভালোবাসার উষ্ণতা নিয়ে পৌঁছে গেছে অদম্য বাংলাদেশ। শীতে আর কেউ শীতবস্ত্রের অভাবে যেন কষ্ট না পায় তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ভালুকায় বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা

সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দিয়েছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠক সংগঠন অদম্য বাংলাদেশ। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ‘চোখের আলো’ শিরোনামে বিনামূল্যে আই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১২ নভেম্বর। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। চোখের চিকিৎসা নিতে আসা ৫৮৩ জনকে বিনামূল্যে ওষুধ ও চশমা বিতরণ এবং ৭৮ জনের ছানি অপারেশন করা হয়।

ভালুকা উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিল চোখের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য। পাঁচগাঁও গ্রামের আই ক্যাম্প প্রাঙ্গণে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের চিকিৎসা নিতে নারী-পুরুষ ও শিশুর ঢল নামে। চিকিৎসকরা রোগীদের চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, ওষুধ ও চশমা দেন।

যেসব রোগীর ছানি অপারেশন প্রয়োজন ছিল, তাদের ভর্তি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের ঢাকার প্রাইম ব্যাংক চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি ও ছানি অপারেশন করা হয়। এর আগে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের তারিখ ও সময় জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী সকাল থেকেই সেবাপ্রত্যাশীরা নির্ধারিত স্থানে চলে আসেন। তারা যেন সুশৃঙ্খলভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে অদম্য বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা।

পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘চোখে ঝাপসা বান্ধে, পড়বার পারি না কিছু। দুপুরবেলা চোখে কিছু দেহি না। আমার এই সমস্যা দেড় বছর থেইক্যা। ডাক্তারে দেইখা কইছে ছানি অপারেশন লাগব। তারা নাহিন বিনা পয়সায় অপারেশন করাইয়া দিব। আল্লাহ দিলে অপারেশনের পর চোখে দেখতাম পারমু।’

ক্যাম্পে ছয়শ রোগীকে দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা

শুধু আনোয়ারা, ছামিরজান খাতুন বা হামিদুল্লাহ নন, বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা প্রায় ৬০০ চোখের রোগী।

এ চক্ষু ক্যাম্পে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন ঢাকার প্রাইম ব্যাংক চক্ষু হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

সেলাই মেশিন ও হুইলচেয়ার বিতরণ

সিলেটে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠক সংগঠন অদম্য বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে অসহায়-হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সেলাই মেশিন ও হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়। নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে ৪০ জনকে সেলাই মেশিন ও ৪০ জনকে হুইলচেয়ার দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘বিজয়ের মাসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বিনামূল্যে হুইলচেয়ার ও সেলাই মেশিন বিতরণ করছে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ। এটি নিশ্চয়ই মহৎ কাজ। এজন্য প্রশংসা করতে হয়।’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের সফলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক বড় ও উন্নত দেশ কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে হিমশিম খেয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন প্রায় ১০ লাখ পরিবারকে ঘর উপহার দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। কম দামে নিত্যপণ্য কেনার জন্য স্বল্প আয়ের প্রায় ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বছরের প্রথম দিনেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে সরকার বই তুলে দিতে পারছে। এটা সরকারের অন্যতম সফলতা।’

প্রতিদিনের বাংলাদেশের সিলেট ব্যুরোপ্রধান চয়ন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব। এ সময় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সুবিধাবঞ্চিতদের সেলাইমেশিন বিতরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

সেলাই মেশিন ও হুইলচেয়ার পেয়ে দারুণ খুশি উপকারভোগীরা। তাদেরই একজন লামাপাড়া বিলপাড়ের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সি মাহতাবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার আমার। চারজনের সংসারে টানাপড়েন লেগেই থাকত। সংসারের চাহিদা মিটিয়ে একটি সেলাই মেশিন কেনা কঠিন ব্যাপার ছিল। অনেকটা স্বপ্নের মতো বলা যায়। আজ থেকে নিজের মালিকানার মেশিনের সেলাইয়ে সংসার চলবে।’

ছোট্ট চার সন্তানকে নিয়ে কল্পনা রানী দাসের সংসার। এক যুগ আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে টেইলার্সের দোকানে সেলাইয়ের কাজ নেন। ভেবেছিলেন নিজের টাকায় একটি সেলাই মেশিন কিনবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হচ্ছিল না। বিনামূল্যে পাওয়া সেলাই মেশিন তার ভাগ্যের চাকায় গতি আনবে বলে মনে করেন এই নারী।

প্রতিবন্ধী শামসুল হক বলেন, ‘কিছুটা হলেও নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারব এবং শারীরিকভাবে আরাম পাব।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা