× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গরিবের সেই দুটি ট্রেন আজও চালু হলো না

বগুড়া অফিস

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:০২ পিএম

আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৪ পিএম

বগুড়া রেলস্টেশন। ছবি : সংগৃহীত

বগুড়া রেলস্টেশন। ছবি : সংগৃহীত

বগুড়ার ওপর দিয়ে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও কমানো হয়েছে মেইল ও লোকাল ট্রেন। ৭ আপ/৮ ডাউন (উত্তরবঙ্গ মেইল) এবং ৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন নামে পরিচিত দুটি ট্রেন বন্ধ রাখায় জেলার অভ্যন্তরে যাতায়াতকারী বিশেষত নিম্ন আয়ের লোকজনের ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় তাদের সড়ক পথে তিনগুণ বেশি ভাড়ায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। 

স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে বন্ধ করা দুটি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে বলেছেন, বন্ধ ওই দুটি ট্রেনকে এ অঞ্চলের মানুষ গরিবের ট্রেন হিসেবেই জানে। কারণ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে বাসে কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য। যে কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন ওই দুটি ট্রেনেই যাতায়াত করতেন। 

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, ‘’রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন  ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল বগুড়া সফরে এসে বন্ধ থাকা ওই ট্রেন দুটি চালুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন আমরা বেশ আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু ২৯ আগস্ট পাশের জেলা গাইবান্ধার বোনারপাড়ায় বন্ধ থাকা ‘রামসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ১১ বছর পর আবার চালু করা হলো। অথচ বগুড়ার সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়গামী ওই দুটি ট্রেনের ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আর কোনো কথাই বললেন না। এতে আমরা খুবই হতাশ।’’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেড় দশক আগেও বগুড়ার ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকাগামী শুধু ‘করতোয়া এক্সপ্রেস’ নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করত। তখন বগুড়ার সান্তাহার থেকে ঢাকা, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও গাইবান্ধার বোনারপাড়া রুটে লোকাল ও মেইল ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৯ জোড়া (আসা-যাওয়া মিলে)। এর মধ্যে ‘পদ্মরাগ কমিউটার’ (২১ আপ ও ২২ ডাউন), ‘বগুড়া কমিউটার’ (১৯ আপ ও ২০ ডাউন), এবং ‘লোকাল’ (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) নামে তিন জোড়া ট্রেন বগুড়ার সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে চলাচল করত। অন্য দুই জোড়া ট্রেনের মধ্যে ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ (৭ আপ ও ৮ ডাউন) সান্তাহার-পঞ্চগড়-সান্তাহার এবং ‘কলেজ ট্রেন’ নামে পরিচিত লোকাল (৪৯১ আপ ও ৪৯২ ডাউন) ট্রেন সান্তাহার-বোনারপাড়া-সান্তাহার রুটে চলাচল করত। 

পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা একে একে আরও তিন জোড়া বাড়ানো হয়। এগুলো হলো- লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের ‘লালমনি এক্সপ্রেস’, সান্তাহার-দিনাজপুর-সান্তাহার রুটে ‘দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস’ এবং রংপুর-ঢাকা-রংপুর রুটে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’। নতুন তিন জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার কারণে বগুড়ার ওপর দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ৯ জোড়া বা ১৮টিতে উন্নীত হয়।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আগে থেকে চলাচল করা রাজধানীগামী আন্তঃনগর ‘করতোয়া এক্সপ্রেস’ ট্রেনের গন্তব্য পরিবর্তন করে সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো বগুড়ায় বিদ্যমান ১৩টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র চারটিতে যাত্রাবিরতি করে। তবে লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো জেলা সীমানায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথে সবগুলো স্টেশনেই যাত্রাবিরতি করে। এতে জেলার অভ্যন্তরে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সুবিধা হয়।

তবে প্রায় ৭ বছর আগে ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহারগামী ‘লোকাল’ ট্রেনটি (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালে ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ নামে সান্তাহার-পঞ্চগড়-সান্তাহার রুটে ট্রেনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন দুটি ১০টি বগি নিয়ে চলাচল করত। প্রতিটি বগিতে ৬৮ জন করে ১০টি বগিতে ৬৮০ জন করে বসার ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে দ্বিগুণের বেশি যাত্রী যাতায়াত করতেন। সেই হিসাবে ট্রেন দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ৩ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার শহীদ এম মনসুর আলী সরকার কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম রাজু জানান, ট্রেন যাত্রা নিরাপদ এবং খরচও অনেক কম। সে কারণে তারা সব সময় ট্রেনেই কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। 

তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে সান্তাহারে যেতে বাসে ভাড়া গুণতে হয় ৬০ টাকা। আর ট্রেনের ভাড়া মেইলে ২০ টাকা এবং লোকালে মাত্র ১৫ টাকা। ফসল ঘরে তোলার মৌসুমগুলো বিশেষত ধান কাটার সময় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে এসব ট্রেনে বগুড়া আসেন। এ ছাড়াও বাংলা নববর্ষ, ঈদ ও দুর্গাপূজাসহ নানা উৎসবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য ট্রেনকেই বেছে নেন।’ 

বগুড়ার প্রবীণ সাংবাদিক মুরশিদ আলম মনে করেন, ‘রামসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উৎপত্তিস্থল বোনারপাড়ার পরিবর্তে বগুড়ার সান্তাহার নির্ধারণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ট্রেন কিন্তু সচল হয়ে যায়। তাতে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ খুবই উপকৃত হবেন।

ট্রেন দুটির চলাচল বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার সাজেদুর রহমান জানান, যত দূর জেনেছি জনবল বিশেষত চালক সংকটের কারণে ট্রেন দুটির চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রেন দুটি সহসা চালু হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল’।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা